পবিত্র হজ ২০১৩ | |
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘‘মানুষের মধ্যে যে ব্যক্তি ঈমানদার, কা’বাঘর পৌঁছাতে সক্ষম হয়; তার ওপর আল্লাহর অধিকার হচ্ছে সে যেন হজ করে। [আল কুরআন: সুরা আল-ইমরান: আয়াত ৯৬]
ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তির একটি হলো হজ। ইসলামের পাঁচটি ভিত্তি হলো ঈমান, নামাজ, রোজা, জাকাত ও হজ। এর মধ্যে হজ একমাত্র ইবাদত, যা একই সঙ্গে শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত। যেমন, জাকাত হলো একটি আর্থিক ইবাদত। যার নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা থাকে, তার জন্য কেবল জাকাত ফরজ হয়। আবার, রোজা হলো শারিরীক ইবাদত, যার শারিরীক সামর্থ্য আছে, তার জন্য রোজা ফরজ। কিন্তু, হজ ফরজ হওয়ার প্রথম শর্ত হলো আর্থিক সামর্থ্য থাকতে হবে; এরপরে পথে কোনো বাধা নেই, এমন অবস্থা থাকতে হবে; এবং সেই সঙ্গে হজের নিয়ম কানুন পালন করে আসার মতো শারীরিক সামর্থ্য থাকতে হবে। হজ বিশ্ব মুসলিমকে একাত্ম করে দেয়। বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ও বিশ্ব শান্তির স্বাদ জাগিয়ে দেয় হজ। হজ হলো মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে সৌভাগ্যের মিলনমেলা। হাজিরা হলেন মহান আল্লাহর ঘর বায়তুল্লাহ’র মেহমান। এ কারণে হাজিরা প্রতিটি মানুষ, ফেরেস্তা ও সৃষ্টিকূলের কাছে ভীষণভাবে সম্মানিত। হাজিদেরও খেয়াল রাখতে হবে, সারা জাহানের একচ্ছত্র অধিপতি আল্লাহ’র মেহমান তাঁরা, তাই হজ চলাকালে তাঁদের আচার আচরণে যেন সেই বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হজ সমাপ্ত করে সম্মানিত হাজিরা যখন নিজ দেশে ফিরে আসেন, তখন আল্লাহ’র মেহমান হিসেবে তাঁরা সম্মানিত। আজীবন তাঁরা আল্লাহ’র পবিত্র ঘর বায়তুল্লাহ’র অ্যাম্বাসেডর বা দূত হিসেবে দুনিয়ায় থাকবেন। এ সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। হাজিদের আচার আচরণ এমন হওয়া উচিত, যেন আল্লাহ’র পবিত্র ঘর বায়তুল্লাহ’র দূত হিসেবে সবার কাছে সম্মানিত হয়ে থাকেন। হজের মূল অর্জনটা এখানেই। হজ একটি আরবি শব্দ। যার বাংলা অর্থ হলো হাজির হওয়া। মহান আল্লাহ মানুষের জীবনে একবারই হজ ফরজ করেছেন। প্রতি বছর ৯ জিলহজ হলো পবিত্র হজের দিন। এই দিন আরাফাতের ময়দানে যারা হজের নিয়তে উপস্থিত থাকবেন, তাঁদের হাজিরা আল্লাহ কবুল করেন। হজ শব্দের বিস্তারিত আভিধানিক অর্থ হলো-“নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট ইবাদত পালন করাকে হজ বলে।” এখানে নির্দিষ্ট দিন বলতে ৭ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত বোঝায়। নির্দিষ্ট স্থান বলতে মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা, মক্কা’র ঘর বায়তুল্লাহকে বোঝায়। নির্দিষ্ট ইবাদত বলতে হজের ফরজ (যেমন- ইহরাম বাঁধা, আরাফাতে হাজির হওয়া, বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করা); ওয়াজিব (যেমন, মুজদালিফায় অবস্থান করা, সাফা-মারওয়া পাহাড় সায়ী করা) ও অন্যান্য ইবাদতকে বোঝায়। এই বছর ইংরেজি বর্ষপঞ্জিতে পবিত্র হজ হওয়ার সম্ভাব্য দিন হলো ১৪ অক্টোবর; অর্থাৎ, হাজিরা মিনায় যাওয়া শুরু করবেন ১২ অক্টোবর বা ৭ জিলহজ থেকে। হজ শেষ হবে ১৮ অক্টোবর বা ১৩ জিলহজ। নিয়ম অনুযায়ী হজ শুরু হবে মিনা থেকে; আরাফাতে হজের মূল হাজিরা দিয়ে রাতে মুজদালিফা অবস্থান শেষে সকালে আবার মিনায় এসে প্রথমে হাজিরা পশু কোরবানি করবেন; তারপর শুধু বড় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করে মাথার চুল মুণ্ডন করবেন, এর মাধ্যমে তাঁরা ‘হালাল’ হবেন; এরপরে আবার দ্বিতীয় দিনে তিন শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, তারপরে বায়তুল্লাহতে এসে ফরজ তাওয়াফ শেষ করে পরদিন আবার তিন শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন। আর এর মধ্য দিয়েই হবে হজের সমাপ্তি। পবিত্র মক্কা হতে ৫৫০ কিলোমিটার দূরে পবিত্র মদিনা; যেখানে শুয়ে আছেন আল্লাহ’র হাবিব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব হাজিরা পবিত্র হজ পালন করতে গেলে মদিনায় রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা জিয়ারত করে আসেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র রওজার সামনে দাঁড়িয়ে সালাম জানান। এ এক অপূর্ব অনুভূতি। যেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ প্রতিটা মুসলমানের জীবনে আজীবন অনুকরণীয়, সেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র রওজার সামনে দাঁড়িয়ে সালাম জানানো এক বিরাট ভাগ্যের ব্যাপার বটে। যেহেতু হজ জীবনে একবার মাত্র ফরজ এবং স্বাভাবিকভাবেই পবিত্র হজ চলাকালে আনুমানিক ২০ লাখ মুসল্লির মাঝে মক্কা, মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা, মদিনা শহরের জায়গাগুলো চেনা অনেক কঠিন, তাই, হজ্জে দরকার অভিজ্ঞ, হাক্কানী আলেমের সার্বক্ষণিক সহায়তা। হজ নিয়ে বাংলা ভাষায় প্রথম ওয়েবসাইট www.holyhajjbd.com এ রয়েছে হজের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য। মহান আল্লাহ’র অশেষ রহমতে ভিসা সেন্টার ট্রাভেলস ২০১৩ সালে হাজিদের খিদমতে দু’টি আকর্ষণীয় প্যাকেজ করেছে। যার একটি মক্কা-মদিনায় ১৮ দিন পাঁচ তারকা হোটেলে ও মিনায় নয়দিন (হজসহ) তিন-তারকা হোটেলে চার লাখ ৭৫ হাজার টাকার। আরেকটি মক্কা-মদিনায় ১৮ দিন তিন-তারকা হোটেলে ও মিনায় নয়দিন (হজসহ) তিন-তারকা হোটেলে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকার। এই হজ কাফেলায় একজন প্রসিদ্ধ ও অভিজ্ঞ আলেমের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের খাদেম দল সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন। ১২০ জনের কাফেলা রওনা করার সম্ভাব্য দিন ২২ সেপ্টেম্বর ও দেশে ফেরার সম্ভাব্য দিন ২০ অক্টোবর। আল্লাহ’র মেহমানরা যেন একটি সহিহ, শুদ্ধ ও কবুল হজ সম্পন্ন করতে পারেন, তাই, হজের আগে বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হবে কাফেলার সদস্যদের জন্য। এই কাফেলার নেতৃত্বে থাকছেন স্বনামধন্য আলেমে দ্বীন আলহাজ হাফেজ মাওলানা লুৎফর রহমান। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় থাকছেন এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আলহাজ সেলিম রেজা। যোগাযোগ এর জন্য- ০১৭১৫০১৩৮৫৭ অথবা ০১৬১৬০১৩৮৫৭ অথবা ৯৬৬৩৮৩১ নম্বরে ফোন করতে পারেন। এসব নম্বরে হজ বুকিং সম্পর্কে জানতে ফোন করতে পারেন প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। হজ সম্পর্কে মাসলা-মাসায়েল জানতে ফোন করতে পারেন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। অথবা সরাসরি অফিসে আসতে পারেন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে, বাড়ি-৪৭, রোড-৩/এ, ধানমণ্ডি (আওয়ামী লীগ অফিসের একটি বাড়ি পরে), শুক্রবার অফিস বন্ধ, তবে ফোনে যোগাযোগ করতে পারেন। উল্লেখ্য, এই বছরের মুয়াল্লিম ফি জমা দেওয়ার শেষ সময় ৩০ মে। জীবনে একটিবার মাত্র হজ ফরজ; তাই, সেই ফরজটি পালনের সময়ে, আল্লাহ’র ঘরে হাজিরা দেওয়ার সময়ে সম্মানিত হাজিরা যেন নির্ভুলভাবে সব নিয়ম-কানুন পালন করে আসতে পারেন—সেটা আমাদের সবার লক্ষ হওয়া উচিত। আমাদের যেই আবেগ আমাদের অন্তর হতে বের হয়, সেই পবিত্র আবেগ যেন বিশুদ্ধভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কবুল করেন। সেই পবিত্র বাণী, “লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক, লাব্বায়েক লা- শারিকালাকা লাব্বায়েক, ইন্নাল হামদা ওয়ানিয়ামাতা লাকাওল মূলক, লা শারিকালাকা লাব্বায়েক”। |
রোজা মানে শুধু ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্ট নয় সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া ও পান করা থেকে বিরত থাকা, পরিভাষায় যাকে আমরা বলি- রোজা বা সিয়াম পালন- এটাই রমজানের প্রধান আকর্ষণ। এ মাসটির এমন মহিমান্বিত সম্মানের এটাই প্রথম কারণ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রোজার মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, আদম সন্তানের প্রতিটি আমলের বিনিময়ে দশগুণ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আল্লাহ পাক বলেন, রোজার বিষয়টি ভিন্ন। রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেবো। বান্দা আমার জন্যই তার লালসা-প্রবৃত্তি, তার পানাহার ত্যাগ করেছে। এক রোজাদার বান্দার জন্য দু’টি খুশির উৎসব। একটি তার ইফতারের সময়ের খুশি এবং আরেকটি তার মহান রবের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ের আনন্দ। রোজাদার মানুষের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ পাকের কাছে মিশক আম্বরের সুঘ্রাণের চেয়েও বেশি খুশবুময়। (বুখারী, মুসলিম) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, যে মুসলমান ঈমান এবং ধৈর্যের সঙ্গে পূণ্য কামনায় রমজান মাসজুড়ে রোজা রেখেছে, তার অতীত জীবনে কৃত সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (...
Comments
Post a Comment